অন্যান্য কলকাতা 

বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট নিয়ে সংশয়! জোট না হলে কার ক্ষতি?

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম : ইন্ডিয়া জোটর  অন্যতম শরীক তৃণমূলের সঙ্গে আদৌ কংগ্রেসের এ রাজ্যে জোট হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। উনিশে ডিসেম্বর দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোটের যে বৈঠক হয়েছিল সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বৈঠকে যোগ দিয়েই যে কাজটি করতে চেয়েছিলেন তা হলো রাজ্যে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং আসন রফা সম্পূর্ণ করা।

কিন্তু বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে দিল্লির অশোকা হোটেলে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক হলেও শেষ পর্যন্ত আসন রফা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এই বৈঠকে ঠিক হয় যে ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা বেশ কয়েকটি জায়গায় যৌথভাবে মিটিং সভা সমাবেশ করবে তারপর জানুয়ারি মাস নাগাদ আসন রফা সম্পন্ন করা হবে। এদিকে সম্প্রতি রাহুল গান্ধীর নির্দেশে কংগ্রেস সভাপতি পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের অফিসিয়াল নেতৃত্বকে দিল্লিতে তলব করেছিলেন। এই বৈঠকে দলের সর্বস্তরের শাখা সংগঠনের রাজ্য স্তরের সভাপতিরা যোগ দিয়েছিলেন সেই বৈঠক শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাহুল গান্ধী জানতে চান কারা কারা তৃণমূলের সঙ্গে আসন রফা করতে রাজি আছেন? এ কথা শোনার পর একমাত্র প্রদেশ সেবা দলের সভাপতি রাহুল পান্ডে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে হাত তোলেন!

Advertisement

কার্যতো এই বৈঠকে সকলে একা লড়াইয়ের পক্ষে সওয়াল করেন। কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সি স্পষ্ট করে বলেন, কংগ্রেস দল আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে জোট করবে না। একইসঙ্গে ঠিক ঠিক হয়েছিল যে এ রাজ্যে সাতটি লোকসভা আসন যদি তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে দেন তাহলে জোট নিয়ে কংগ্রেস চিন্তাভাবনা করতে পারে। কিন্তু তা যে অসম্ভব এটা মানতেই হবে। কারণ তৃণমূল নেত্রী কংগ্রেসকে মাত্র দুটি আসন ছাড়া আর একটিও বাড়তি আসন দিতে রাজি নয়। তাই শোনা যাচ্ছে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নাকি? ইতিমধ্যেই সিপিএম দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে জোট করার জন্য প্রস্তুত থাকতে অনুরোধ করেছেন।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এটা স্পষ্ট হয়েছে এই বাংলায় আগামী দিনে তৃণমূলের সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে অন্তত কংগ্রেস জোটে যাবে না। কংগ্রেস দল মনে করছে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির একটা গোপন সমঝোতা আছে। আর এজন্যই যদি জোট হয় তাহলে কংগ্রেসের খুব বেশি লাভ হবে না আর জোট না হলে তাতে কংগ্রেসের কোন ক্ষতি হবে না। বরং যেটা হতে পারে সেটা হল তৃণমূল কংগ্রেস অনেকগুলি আসন হেরে যেতে পারে।

সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশ এই নির্বাচনে তৃণমূলকে ভোট নাও দিতে পারে। এমনকি দলের অভ্যন্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের যারা মুসলিম নেতা তাদের মধ্যেও অনেক ক্ষোভ রয়েছে। তাছাড়া ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে এখনো পর্যন্ত সেভাবে এ রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য মমতা সরকার বড় কোন উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ। তৃণমূল দলে যে সকল মুসলমান নেতা রয়েছেন তাদেরও দলের মধ্যে খুব বেশি গুরুত্ব নেই একই সঙ্গে একের পর এক মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় জন প্রতিনিধি নির্বাচনে যেভাবে অমুসলিমদের গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূল তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়াও নওশাদ সিদ্দিকীকে ৪২ দিন জেলে রাখার ফল তৃণমূল কে যে ভুগতে হবে সে বিষয়ে এ রাজ্যের বাঙালি মুসলমান সমাজ বেশ খানিকটা নিশ্চিন্ত। অনেকটা তৃণমূল কংগ্রেস নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মেরেছে নওশাদকে জেলে রেখে। উল্টোদিকে বিজেপি সম্পর্কে তৃণমূল সরকারের অবস্থান নরম হওয়ার ফলে এ রাজ্যের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভ্রান্ত তৈরি হয়েছে। আর লোকসভা নির্বাচন যেহেতু এ রাজ্যের সরকারের পতনের নির্বাচন নয় সুতরাং সেক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সমাজ নিজেদের অবস্থান থেকে বিপরীত মেরুতে পরিবর্তিত হতেই পারে। তারা মনে করছে লোকসভা নির্বাচনে যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধাক্কা দেওয়া যায় তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যের সংখ্যালঘুদের স্বার্থে অনেকটাই কাজ করার সুযোগ পাবে। আর যদি তা না হয় তাহলে তিনি সংখ্যালঘুদের স্বার্থে তেমন কোন কাজ করবেন না।

সুতরাং এই পারসেপশন থেকে এরাজের সংখ্যালঘু ভোট যদি সরাসরি তৃণমূলের না পড়ে বিভক্ত হয়ে যায়। যেটার সম্ভাবনা প্রবল তাহলে বিপদ বাড়বে তৃণমূলের। উল্টো দিকে কংগ্রেস যদি তৃণমূলের সঙ্গ ছেড়ে দেয় তাহলে তারা সিপিএমকে যেমন পাবে, একই রকম ভাবে পাবে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টকেও ফলে দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে অনেকটাই বেগ পেতে হবে। কংগ্রেস সিপিএম এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট জোট হলে এই রাজ্যে তৃণমূল যে ব্যাপক ধাক্কা খাবে সে বিষয়ে সন্ধেহ থাকার কোন অবকাশ নেই।

জাতীয় কংগ্রেস এ বিষয়ে মনে করছে যে তৃণমূল কংগ্রেস যদি বেশি আসন পায় আর দিল্লিতে যদি বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন এককভাবে না পায় তাহলে সেক্ষেত্রে তৃণমূল বিজেপিকে সমর্থন দিতে পারে। আর যদি তৃণমূলের আসন সংখ্যা কমে যায় একই সঙ্গে বিজেপির আসন সংখ্যাও খানিকটা কমে যায় এবং বাম কংগ্রেস যদি পাঁচ থেকে সাতটি আসন পায় সেটা তাদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ দিল্লিতে বিজেপি সংকটে পড়লে আর যাই হোক বামেদের যে সমর্থন পাবেনা সে বিষয়ে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল নিশ্চিত। এইসব সাত পাঁচ ভেবে কংগ্রেসও চাইছে না এ রাজ্যের তৃণমূলের সঙ্গে জোট হোক। তবে কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্ত এ রাজ্যের রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেয় সেটাই এখন দেখার। এটাও ঠিক রাজনীতি সম্ভবনাময় শিল্প তাই যেকোনো সময়ই সব কিছুর পট পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে।

তাই এআইসিসি যদি চায় কংগ্রেস তৃণমূলের জোট তাহলে সেটা হওয়া শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। তবে এখনো পর্যন্ত এ আইসিসি বা কংগ্রেস হাই কমান্ডের সিদ্ধান্ত যা রয়েছে তা থেকে এই অনুমান বাস্তব হলেও হতে পারে।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ